
তিনটি দুর্নীতি মামলার চাপের মধ্যে পূর্ণ ক্ষমার আবেদন করেছেন নেতানিয়াহু। তার সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছে ক্ষুব্ধ মানুষ। প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়—এটি একটি ব্যতিক্রমী আবেদন।
দুর্নীতি মামলায় দোষ স্বীকার না করেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের কাছে পূর্ণ ক্ষমার আবেদন করেছেন। তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশজুড়ে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আবেদন জমা দেওয়ার পরপরই তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।
প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে উত্তেজনা
তেল আবিবে প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের সরকারি বাসভবনের সামনে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় কয়েকজন আইনপ্রণেতা এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মীরাও। আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক শিকমা ব্রেসলার বলেন,
“তিনি চাইছেন পুরো বিচারটাই বাতিল হয়ে যাক, কোনো দায় না নিয়েই… যেভাবে তিনি এই দেশটাকে ছিঁড়ে ফেলেছেন তার কোনো মূল্য না দিয়েই।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলের মানুষ জানে কী ঝুঁকি আছে। বিষয়টি দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।”
দুর্নীতির তিনটি বড় মামলা
ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বর্তমানে তিনটি পৃথক দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি। পাঁচ বছর ধরে মামলাগুলোর বিচার চলছে।
প্রথম মামলায় অভিযোগ রয়েছে, নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারা ধনকুবেরদের কাছ থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের বিলাসপণ্য গ্রহণ করেছেন এবং এর বিনিময়ে রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন।
অন্য দুটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের দুই শক্তিশালী গণমাধ্যমের কাছ থেকে ইতিবাচক কাভারেজ পাওয়ার জন্য প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে। সব অভিযোগই তিনি বরাবর অস্বীকার করে আসছেন।
নেতানিয়াহুর আইনজীবীরা প্রেসিডেন্টকে পাঠানো ১১১ পৃষ্ঠার চিঠিতে দাবি করেছেন, মামলাগুলো চলতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি খালাস পেতেন।
‘বিচার দেশে বিভাজন তৈরি করছে’: নেতানিয়াহু
এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, তিনি বিচারিক প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে চান, তবে দেশের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন কিছু নির্দেশ করছে। তার ভাষায়:
“বিচার অব্যাহত থাকার এ সময়টি আমাদের ভেতর থেকে ছিঁড়ে ফেলছে, বিভক্ত করছে, সংঘাত বাড়াচ্ছে।”
তিনি জানান, দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণেই তিনি পূর্ণ ক্ষমার আবেদন করতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, তারা নেতানিয়াহুর ক্ষমা চাওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়:
“এটি একটি ব্যতিক্রমী আবেদন, যার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষের মতামত পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দায়িত্বশীলভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”
ক্ষমা দেওয়া হবে কি না—তা এখনো অনিশ্চিত। তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান বিচারপ্রক্রিয়ার মাঝপথে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা দেওয়া নজিরবিহীন এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন গত কয়েক বছরে ইসরায়েলের রাজনীতিকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছে। বিচার ব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতির মামলা, নিরাপত্তা ইস্যু এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সময় পার করছে।
সাম্প্রতিক এই ক্ষমার আবেদন সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিরোধীদল নেতানিয়াহুকে “ব্যক্তিগত স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করার” অভিযোগ তুলেছে, আর সমর্থকেরা বলছেন—এটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সূত্র: আল-জাজিরা
পরবর্তী সিদ্ধান্ত এখন প্রেসিডেন্ট হারজগের হাতে—এটি স্পষ্ট। তবে ইসরায়েলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও বড় এক পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়েছে।