
সুদানের এল-ফাশের থেকে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে: জাতিসংঘ
সুদানের এল-ফাশের শহরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)–এর সাম্প্রতিক অভিযানের পর শহরটিতে ঘটে যাওয়া মানবিক সংকট ও ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিতে শুরু করেছেন বেঁচে ফেরা মানুষজন। তাদের অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে ভয়াবহ পরিস্থিতির চিত্র, যা সুদানের গৃহযুদ্ধের আরেকটি নির্মম বাস্তবতা সামনে নিয়ে এসেছে।
৬২ বছর বয়সী আবদুল কাদির আবদুল্লাহ আলি ছিলেন এল-ফাশেরের অন্যতম বাসিন্দা। দীর্ঘ অবরোধের সময় ডায়াবেটিসের ওষুধ না পাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায় এবং স্থায়ীভাবে পায়ে সমস্যা তৈরি হয়। তবে আরএসএফের শহর দখলের দিন হঠাৎ শুরু হওয়া গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তিনি সামান্য ব্যথাও টের পাননি।
আলির ভাষায়, “সেদিন হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। সবাই জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকে।”
১৮ মাসের অবরোধের পর এল-ফাশেরের পতন সুদানের চলমান সংঘাতের সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্তগুলোর একটি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিবিসি উত্তর সুদানে সেনা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরে গিয়ে বেঁচে ফেরা মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যদিও পুরো সফরজুড়ে কর্তৃপক্ষ তাদের কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের ক্ষমতা দখল ইস্যুতে সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি ছিল এল-ফাশের, যা দখল নেওয়া আরএসএফের জন্য বড় কৌশলগত সাফল্য হিসেবে দেখেছে অনেকে।
শহর দখলের পর সেখানে সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঘটনাগুলোর নিন্দা জানিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে সংঘাত থামানোর আহ্বান জানিয়েছে।
আলির বক্তব্য অনুযায়ী, আরএসএফ সাধারণ মানুষকেও ভয়াবহভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তিনি পালানোর সময় কখনো দৌড়ে, কখনো হামাগুড়ি দিয়ে, কখনো আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে কয়েক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন এবং শেষ পর্যন্ত পৌঁছান গুরনি গ্রামে।
সেখানে তিনি দেখেন, তার মতো অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
গুরনি গ্রামে পাওয়া যায় মোহাম্মদ আবুবকর আদম নামে আরেক শরণার্থীকে। তিনি এর আগে জমজম শরণার্থী শিবিরের কর্মকর্তা ছিলেন। আরএসএফ শিবির দখল করার পর তিনি এল-ফাশেরে পালিয়ে যান এবং শহর পতনের আগের দিন সেখান থেকেও প্রাণ বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন। তিনি জানান, পথজুড়ে পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক ছিল যে নিজেকে বয়স্ক দেখানোর জন্য তিনি দাড়ি সাদা রঙ করেন।
তাওইলা এলাকার মানবিক ক্যাম্পে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছেন সীমান্ত পেরিয়ে চাদের দিকে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এল-ফাশের পতনের আগের ২ লাখ ৬০ হাজার বাসিন্দার অর্ধেকেরও কম মানুষের অবস্থান এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অনেকেই ভয়, আটক হওয়ার ঝুঁকি বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আতঙ্কে দূরে যেতে পারেননি।
শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা বহু নারী জানিয়েছেন, পথে বিভিন্ন চেকপোস্টে নিষ্ঠুর আচরণ ও ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছেন তারা। একজন ১৯ বছর বয়সী তরুণী বলেন, প্রতিটি চেকপোস্ট ছিল ভয়ের আরেকটি পরীক্ষা। তিনি ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে পালাতে গিয়ে পথেই হারিয়েছেন তাদের দাদিকে।
বিবিসির মতে, বেঁচে ফেরা মানুষের অভিজ্ঞতা—বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের বর্ণনা—ইঙ্গিত করছে যে সাধারণ মানুষকে আলাদা করা এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বহু এলাকাতেই ঘটেছে। সূত্র: বিবিসি